ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। সোমবার রাতে শাহবাগ থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবে আলম জানান, আটক করা হলেও রাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, নুরসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলার প্রতিবাদে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে গেলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। এ সময় মিছিলকারীরা সামনে এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। সেখানে নুরুল হক নুরসহ আন্দোলনকারী সাতজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আটকের বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নুরের নেতৃত্বে একটি মিছিল শাহবাগে এসে বিশৃঙ্খলা ও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে।

সেখান থেকে নুরসহ ৭ জনকে আটক করা হয়।

সোমবার রাজধানীর লালবাগ থানায় নুরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগ অস্বীকার করে নুরুল হক নুর দাবি করেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে। এ মামলায় নুর তিন নম্বর আসামি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আশরাফ উদ্দিন। তিনি জানান, হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আর ভিপি নুরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি চার আসামি হলেন- নাজমুল হাসান সোহাগ, মো. সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ-হিল-বাকী। মামলার ঘটনাস্থল হিসেবে লালবাগের নবাবগঞ্জকে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নুরুল হক নুর সোমবার বিকালে মানবজমিনকে বলেন, ওই মেয়ের সঙ্গে আমার কোনোদিন দেখাই হয়নি। দুই মাস আগে সে আমাকে ফোন দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে যে, কোনো এক ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল, যেটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সেজন্য আমাকে ভূমিকা রাখতে বলা হয়। এরপর ফোন দেবে বলে সে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি। তিনি বলেন, এক সময়ে সে ছেলেটির পরিচয় দেয় আমাকে এবং বলে আমরা যেন ছেলেটিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করি। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানি ছেলেটির নাম নাজমুল সে আমাদের সংগঠনের কোনো দায়িত্বে নেই। তবে সে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতো। তাই আমি মেয়েটিকে বলেছি সেতো আমাদের সংগঠনের কেউ না, পদেও নেই। এরপর মেয়েটি বলে নাজমুলসহ আরো একজনকে বহিষ্কার করতে হবে যে হচ্ছে- আমাদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। কিন্তু আমি তাকে বলি সে তো আমাদের আহ্বায়ক। আমি আহ্বায়ককে কীভাবে বহিষ্কার করবো। তোমার সমস্যা মনে হলে আমি আইনগত সহযোগিতা করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরুদ্ধে সেলে অভিযোগে সহযোগিতা করবো। কিন্তু শেষে সে আর যোগাযোগ রাখেনি। নুর বলেন, আমি মনে করি মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা। আর মেয়েটির বাড়ি ময়মনসিংহ। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন নেতা মেয়েটিকে টাকা-পয়সা দিয়ে মামলা করতে সহযোগিতা করেছেন।

উল্লেখ্য, ধর্ষণে অভিযুক্ত হাসান আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে এ আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here