লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার শিকার মো. শহিদুন্নবী জুয়েল (৫০) মসজিদে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননা করেননি বলে জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ ঘটনায় সংস্থাটির তদন্ত কমিটির প্রধান ও কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফাউজুল কবিন এ তথ্য জানান।

১ নভেম্বর, রবিবার সকাল থেকে কমিশনের তদন্তদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ বিভিন্নজনের সাক্ষ্য নিয়ে সংবাদসম্মেলনে এসব কথা বলেন আল মাহমুদ ফাউজুল।

এ বিষয়ে আল মাহমুদ ফাউজুল কবিন জানান, জুয়েল পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননা করেননি। গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে হত্যার পর তার মরদেহ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মসজিদের ঈমাম ও খাদেমের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি নিহত জুয়েল কোরআন অবমাননা করেননি। তার বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়ানো হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, পুরো ঘটনাকে তিন ভাগে বিভক্ত করে তদন্ত করছে কমিশন। সাক্ষীরা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন ফলে ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা তা মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলেই পুরো ঘটনাটি পরিস্কার হবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত ২৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই মসজিদে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে আবু ইউনুছ মো. সহিদুন্নবী জুয়েল নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে তার লাশ পুড়ে ফেলে স্থানীয় কিছু মানুষ। নিহত ব্যক্তি রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রি পাড়ার মৃত আবু ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন সুলতান জোবায়ের আব্বাস (৪৫) নামের আরো এক ব্যক্তি। তিনি একই এলাকার শেখ আব্বাস আলীর ছেলে, পেশায় দলিল লেখক।

এ বিষয়ে মসজিদের খাদেম জোবেদ আলী বলেন, ‘আবু ইউনুছ মো. সহিদুন্নবী জুয়েল নামের ওই ব্যক্তি প্রথমে আসরের নামাজ আদায় করেন। এরপর তিনি নিজেকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে মসজিদের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র খুঁজতে থাকেন। তিনি কোরআনের ওপর পা দেননি। কিন্তু হঠাৎ করে মসজিদের বারান্দা থেকে হোসেন নামের এক ব্যক্তি তাকে আটক করে মসজিদের বাইরে নিয়ে গিয়ে জুতা খুলে মারধর করেন। মুহূর্তের মধ্যে শত শত লোক জড়ো হয়। পরে হাফিজুল ইসলাম নামে এক ইউপি সদস্য এসে তাকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়।’

মসজিদের ঈমাম সৈয়দ আলী বলেন, ‘আমি যখন মসজিদ থেকে বের হই, তখন ওই ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন। তার আচরণ দেখে আমার ভারসাম্যহীন মনে হয়েছে।’

লালমনিরহাট ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ওই মসজিদ পরিদর্শন করেছি। ঈমাম, খাদেম ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, গুজব ছড়িয়ে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে।’

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে। সিআইডিসহ অন্যান্য সংস্থা ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করছে। এই ঘটনায় একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here