jummah-mubarak

ইসলামে প্রত্যেক ব্যক্তির উপর নামায আদায় করা ফরজ। আর মুমিনদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও তাহাজ্জুদ, চাশত, ইশরাক্ ও অন্যান্য সালাত রয়েছে। এমনি একটি হলো জুমা’র সালাত। শুক্রবার যোহরের সময়ে আদায় করা হলেও যোহরের সালাতের সাথে এর কিছুটা নিয়মগত পার্থক্য আছে। তবে এই নামায আদায় করা ফরজ।

জুমার’র অর্থ হলো একত্রিত হওয়া। প্রতিটি শুক্রবারে মসজিদে সকল মুসল্লি যোহরের সালাত আদায় করার জন্য একত্রিত হন, এজন্য এই নামাযকে জুমার নামাজ বলা হয়।

জুমার নামাজ আদায় করার জন্য প্রত্যেক শুক্রবার দুপুর বেলা পবিত্রতার সহিত গোসল করে, ভালো পোশাক পরিধান করে, নখ ও চুল সুন্দর করে কেটে, আতর বা সুগন্ধি মেখে মসজিদে যাওয়া খুবই ভালো। এই নামায পড়া তাদের উপর ফরজ, যাদের উপর কিনা যোহরের নামায পড়া ফরজ।

জুমার নামাজ কয় রাকাত ও কি কি? 

জুমা’র সালাত আদায়ের জন্য ২ রাকাত ফরজ আছে। তবে ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকআত কা’বলাল জুমা এবং পরে ৪ রাকআত বা’দাল জুমা  আদায় করতে হয়। বা’দাল জুমা আদায় করা সুন্নত।

সপ্তাহের শুক্রবারে যোহরের নামায আদায় করার সময়ই জুমার নামাজের ওয়াক্ত। জুমা’র নামাজের রাকাত সংখ্যা ও নিয়ত করার নিয়ম নিম্নরূপ-

চার রাকাত কাবলাল জুমার নিয়ত

বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আর’বায়া রাকাআতি ছালাতি কাবলাল জুমুয়াতি – সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল ক্বাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলা মুখী হয়ে মহান আল্লাহর জন্য চার রাকায়াত কাবলাল জুমা’র সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহ সবচেয়ে মহান।

জুমা’র নামাযের দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসকিতা আন জিম্মাতী ফারদুজ্জ’হরি, বি-আদায়ি রাকআতাই ছালাতিল জুমু’য়াতি, ফারজুল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল ক্বাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমার উপর যোহরের ফরজ নামাজ আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কিবলা মুখী হয়ে, জুমা’র দুই রাকায়াত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহ সবচেয়ে মহান।

চার রাকাত বাদাল জুমার নিয়ত

বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবায়া রাকআতি ছালাতি বাদাল জুমু’য়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল ক্বাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে মহান আল্লাহর জন্য চার রাকআত বা’দাল জুমা’ সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহ সবচেয়ে মহান।

জুমার’ দিনের আমল সমূহ ও তার ফজীলত

জুমুয়া’র দিন সপ্তাহের সেরা দিন হিসেবে পুরো মুসলিম বিশ্বে পরিচিত। মুসলিমদের জন্য প্রতি সপ্তাহে আস শুক্রবারকে ঈদের দিন বলা হয়। এই দিনে মুমিন ব্যক্তিরা সকল কাজকর্ম বাদ দিয়ে মহান রবের নিকট হাজিরা প্রদান করে। এ নিয়ে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কিরআনের সূরা জুমু’আ-য় ৯-১০ আয়াতে বলেছেন-

“হে আমার মুমিন বান্দারা! জুমু’য়ার দিনে যখন নামায আদার করার জন্য তোমাদেরকে আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহকে স্মরন করার জন্য অগ্রসর হও। ক্রয় বিক্রয় করা বন্ধ কর। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার, তাহলে এটাই তোমাদের জন্য উত্তম হবে।”(আয়াত- ৯)

“নামায আদায় শেষ হলে তেমরা জমিয়ে ছড়িয়ে যাও, অতঃপর মহান আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান কর। এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্বরন কর, যেন তোমরা সফলদের অন্তর্ভুক্ত হও। “(আয়াত- ১০)

এই আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের এই দিনের নামাযের গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

জুমা’র দিন মসজিদে প্রবেশ করা নিয়ে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন যে, “জুমা’র দিন মসজিদের দফতরে ফেরেশতারা দাঁড়িয়ে থেকে আগত ব্যক্তিদের নাম তালিকাবদ্ধ করেন। যে ব্যক্তি এদিন সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করবে, সে একটি উট জবেহ্ করার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। দ্বিতীয় ব্যক্তি একটি গাভী জবেহ্ করার সওয়াব পাবে। তেমনি তৃতীয় ব্যক্তি একটি মুরগী ও চতুর্থ ব্যক্তি একটি ডিম জবেহ্ করার সওয়াব পাবে। এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, তখন ফেরেশতারা দফতর বন্ধ করে দেন, আর খুতবা শোনায় মনোযোগী হন।” (সহীহ্ বুখারী- ৮৮২)

জুমা’র দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে নবিজী আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমা’র দিন মহান আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টির জন্য গোসল করে, পবিত্র পোশাক পরিধান করে, খুশবু মাখে, অতঃপর ঘর থেকে আের হয়, দুজন ব্যক্তির ঘনিষ্ঠতা নষ্ট না করে, এবং তার উপর ফরজ করা সালাত কায়েম করে- ইমামের খুতবা চুপ করে শোনে, তার এই জুম’আ থেকে পরের জুম’আ পর্যন্ত করা সকল প্রকার সগীরা গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হয়।” (সহীহ বুখারী- ৮৮৩)

জুমার দিনে জুমা’র সালাতে আরো কিছু আমল করা যেতে পারে, যার জন্য মহান রব সন্তুষ্ট হন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

  • জুমা’র দিনে পবিত্র ভাবে গোসল করা।
  • হাত, পা এর  নখ কাটা এবং চুলকাটা।
  • জুমার নামাজে আদায়ের জন্য আতর বা খুশবু ব্যবহার করা।
  • সম্ভব হলে মিসওয়াক করা।
  • শরীরে তেল মাখা।
  • উত্তম ও পরিষ্কার বা সম্ভব হলে নতুন পোশাক পরে জুমার সালাত আদায় করা।
  • সালাত আদায় করার সময় ইমামের দিকে মুখ করে বসা।
  • যানবাহনে না চড়ে নিজ পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
  • এদিন বেশি করে দরুদ পড়া।
  • রবের কাছে বেশি দোয়া করা।
  •  রবের সন্তুষ্টির জন্য দু’রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ নফল সালাত আদায় করা।
  • জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। কারণ, এতে পরের জুমা পর্যন্ত আল্লাহ্ তার বান্দাকে বিশেষ নূর দ্বারা আলোকিত করেন।

জুমার সালাত আদায় না করার শাস্তি

জুমার সালাত আদায় করার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামে মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যে নামায দিয়ে পার্থক্য করা হয়েছে, তাই বোঝা যায় নামাযের গুরুত্ব কতটা! মুমিন ব্যক্তির উপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। তবে চার ধরনের উপর এই নামায আদায় করার জন্য ফরজ করা হয়নি। তারা হলেন- নারী, না-বালক ছেলে, ক্রীতদাস ও মুসাফির বা রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)

বাকি সকলের উপর জুমার দিন সালাত আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ ইচ্ছা করে এই সালাত ছেড়ে দেয় তার জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করা হয়।

মুসলিম ও তিরমিজি হাদিস থেকে জানা যায়, কোনো ব্যক্তি যদি পর পর তিনটি জুমা’র নামায ইচ্ছা করে ত্যাগ করে, তবে সে ইসলামকে তার পেছনে ফেলে আসে। অর্থাৎ ইসলাম ও তার সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। এ থেকে সেই ব্যক্তি আত্মভেলা হয়ে যায়, রবের নিকট পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পায় না। তাই, ঐ ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন।

আরও হাদীস সমূহঃ

জুমা’র দিন নিয়ে সবচেয়ে একটি হাদিস নিচে তুলে ধরা হলো-

যে ব্যাক্তি জুমার দিন সকল সালাত ঠিকমতো আদায় করবে, তার উপর রব খুশি হন। জুমার দিব এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, যে সময় বান্দা দোয়া করলে রব তার দেয়া কবুল করেন। এই সময় প্রতি শুক্রবারেই আসে৷ মেট বারো ঘন্টার মধ্যে এ সময়কে অনুসন্ধান করতে হয়। তবে আসরের নামায শেষ এই সময় অনুসন্ধান করলে তা পাওয়া যাবে, এবং ঐ সময় করা দোয়া রব কবুল করবেন। আসরের শেষ সময়ে নামাযরত ব্যক্তি দোয়া করলে তা অবশ্যই পূরন হবে। (সহীহ বুখারী- ৯৩৫)

অনেকের প্রশ্ন আসর নামাজ শেষ হলে পরের সময়টা নামায আদায়ের জন্য নিষিদ্ধ সময়। তাহলে তখন কোনো নামাযরত ব্যক্তি কীভাবে দোয়া করবেন? এ নিয়ে নবিজী বলেছেন, যে ব্যক্তি তখন বসে মাগরিবের নামায আদায়ের জন্য অপেক্ষা করবে, সে নামাজরত বলেই গণ্য হবে।

উপরেল্লিখিত উপায়ে নামাজ শেষ করার পর কিছু শ্রেষ্ঠ জিকির রয়েছে যা পড়তে পারলে খুব সওয়াব হয়। এখানে কোনটি কতবার পড়তে হবে এ বিষয়ে অনেক লেখা রয়েছে, তবে আপনি যতবার পড়তে চান, পড়তে পারেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেছেন, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। (সুরা : (33:35) Al-Ahzab | (৩৩:৩৫) আল-আহযাব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here