গাওয়া কফি

গাওয়া কফি, যা قهوة غاوا (Arabian Qahwa Coffee ) নামেও পরিচিত, হল আরব অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী কফি পানীয় যা শুকনো লবঙ্গ, এলাচ, আদা, দারুচিনি এবং অন্যান্য মশলা দিয়ে তৈরি। এটি সাধারণত আরবী কফি পাত্র, Dallah (A traditional Arabic coffee pot) নামে পরিচিত, একটি ছোট চুলায় ধীরে ধীরে সিদ্ধ করে তৈরি করা হয়।

গাওয়া কফি
Dallah (A traditional Arabic coffee pot)

দালাহ (আরবি: دلة /কফি পাত্র/English – Dallah) হল একটি ঐতিহ্যবাহী আরবি কফি পাত্র যা শতাব্দী ধরে গাওয়া কফি, কাহওয়া (গাহওয়া) এবং খালিজি (একটি মশলাযুক্ত, তিক্ত কফি) প্রস্তুত এবং পরিবেশন করতে ব্যবহৃত হয়। এটি আরব উপদ্বীপ এবং বেদুইনদের কফি ঐতিহ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

এরাবিয়ান গাওয়া কফির ইতিহাস:

গাওয়া কফির উৎপত্তি ইয়েমেনে হয়েছিল বলে মনে করা হয়, যেখানে এটি শতাব্দী ধরে উপভোগ করা হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহীভাবে, এটি বেদুইন উপজাতিরা তাদের দীর্ঘ ভ্রমণ এবং মরুভূমির কঠোর পরিবেশে শক্তি বৃদ্ধির জন্য পান করত।

তৈরি প্রক্রিয়া:

এটি তৈরির প্রক্রিয়া একটু জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে। প্রথমে, কফি বীজগুলিকে হালকা করে ভাজা হয়, তারপর মশলাগুলির সাথে মিশ্রিত করা হয় এবং মসৃণ না হওয়া পর্যন্ত পিষে নেওয়া হয়।

উপকরণ:

  • কফি বীজ: ২ টেবিল চামচ
  • শুকনো লবঙ্গ: ৩-৪ টি
  • এলাচ: ৩-৪ টি
  • আদা: ১/২ ইঞ্চি টুকরা
  • দারুচিনি: ১/২ ইঞ্চি দণ্ড
  • জল: ২ কাপ
  • চিনি: স্বাদ অনুযায়ী (ঐচ্ছিক)

প্রণালী:

কফি বীজ ভাজা: একটি কড়াইতে মাঝারি আঁচে কফি বীজ হালকা করে ভাজুন যতক্ষণ না সেগুলি হালকা বাদামী রঙের হয় এবং সুগন্ধ বের হয়।

মশলা গুঁড়া করা:
একটি মসলা পেষকদণ্ডে ভাজা কফি বীজ, লবঙ্গ, এলাচ, আদা এবং দারুচিনি একসাথে পিষে মসৃণ গুঁড়া তৈরি করুন।

কফি তৈরি করা:
একটি ছোট পাত্রে জল ফুটিয়ে নিন। ফুটন্ত জলে কফি ও মশলার গুঁড়া মিশিয়ে দিন। আঁচ কমিয়ে দিন এবং ১০-১৫ মিনিট ধরে ঢেকে রান্না করুন।

ছেঁকে নেওয়া: ছাকনি দিয়ে কফি ছেঁকে নিন।

পরিবেশন: এই কফি পরিবেশনে আরবের সংস্কৃতির একটি ছাপ রয়েছে। যেমন,

এরাবিয়ান গাওয়া কফির খাওয়ায়র নিয়ম:

  • এই কফি সাধারণত ছোট, হ্যান্ডেলযুক্ত কাপে পরিবেশন করা হয়।
  • কফি সাধারণত খেজুর বা অন্যান্য মিষ্টি খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয়।
  • আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী মশলার পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারেন।
  • আপনি আরও স্বাদ এবং গন্ধের জন্য কেওড়া জল বা গোলাপ জলের কয়েক ফোঁটা যোগ করতে পারেন।

এরাবিয়ান গাওয়া কফি

এরাবিয়ান গাওয়া কফির স্বাদ:

এই কফির স্বাদ শক্তিশালী এবং মশলাযুক্ত, কফির তিক্ততা মশলাগুলির মিষ্টি এবং সুগন্ধি দ্বারা ভারসাম্যপূর্ণ।

  • কফির বীজ, লবঙ্গ, এলাচ, আদা, দারুচিনির মিশ্রণ থেকে তৈরি এই পানীয়টিতে বিভিন্ন স্বাদের স্তর থাকে।
  • কফির তিক্ততা মশলাগুলির মিষ্টি এবং সুগন্ধি দ্বারা ভারসাম্যপূর্ণ হয়, যার ফলে একটি জটিল এবং আকর্ষণীয় স্বাদ তৈরি হয়।

কিছু লোক গাওয়া কফির স্বাদকে উষ্ণ, মসলাযুক্ত এবং এমনকি চকলেটি বলে বর্ণনা করে। অন্যরা এটিকে কিছুটা তীব্র বলে মনে করতে পারে। অন্যান্য কফি, যেমন এসপ্রেসো বা আমেরিকানো, সাধারণত কম মশলাযুক্ত এবং বেশি তিক্ত হয়।

  • গাওয়া কফি সাধারণত চিনি ছাড়াই পরিবেশন করা হয়, তবে আপনি যদি চান তবে আপনি এতে মিষ্টি যোগ করতে পারেন।
  • কিছু লোক গাওয়া কফিতে খেজুর বা অন্যান্য মিষ্টি খাবার যোগ করতে পছন্দ করে স্বাদের আরও ভারসাম্য আনতে।
  • কফির স্বাদ ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে এটি একটি অনন্য এবং ঐতিহ্যবাহী পানীয় যা অবশ্যই চেষ্টা করা উচিত।

এখানে কিছু বিষয় রয়েছে যা কফির স্বাদকে প্রভাবিত করতে পারে:

  • ব্যবহৃত উপাদানের গুণমান: উচ্চমানের কফি বীজ এবং মশলা ব্যবহার করা গাওয়া কফির স্বাদ উন্নত করতে পারে।
  • তৈরির প্রক্রিয়া: কফি কতক্ষণ রান্না করা হয় এবং এটি কীভাবে পরিবেশন করা হয় তা স্বাদকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • ব্যক্তিগত পছন্দ: কিছু লোক শক্তিশালী, মশলাযুক্ত স্বাদ পছন্দ করে, অন্যরা আরও হালকা, মিষ্টি কফি পছন্দ করে।

এরাবিয়ান গাওয়া মিক্সড কফির উপকারিতা:

গাওয়া কফির কিছু সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: গাওয়া কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা শরীরের কোষকে ক্ষতিকারক মুক্ত র‌্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: গাওয়া কফি আমাদের শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে: কফি মস্তিষ্কের উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে, মনোযোগ, স্মৃতি এবং মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত কফি পান হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: কফি পান টাইপ ২ ডায়াবেটিসের বিকাশের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • পার্কিনসন’স এবং আলঝেইমারের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, কফি পান পার্কিনসন’স এবং আলঝেইমারের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে গাওয়া কফির বৈচিত্র্য:

  • লেভানটাইন কফি – Levantine Coffee- (লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, প্যালেস্টাইন): এটি তুর্কি কফির অনুরূপ, তবে সাধারণত এলাচ দিয়ে মশলা দেওয়া হয় এবং মিষ্টি ছাড়াই পরিবেশন করা হয়। ফেনা ছাড়াই তৈরি করা হয়।
  • এরাবিক কফি (গাওয়া) (সৌদি আরব, ইয়েমেন, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত): এলাচ, জাফরান, লবঙ্গ এবং কখনও কখনও দারুচিনি দিয়ে মশলা দেওয়া হয়, এটি একটি স্বতন্ত্র সুগন্ধ দেয়। হালকা ভাজা সবুজ কফি বিন ব্যবহার করার কারণে এর একটি হালকা সবুজ-বাদামী রঙ রয়েছে। সাধারণত মিষ্টি ছাড়াই পরিবেশন করা হয়, খেজুর বা আরবি মিষ্টি যেমন বাকলাভা দিয়ে তিক্ততা দূর করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে ডাল্লা বা কানাকা নামক একটি বড় অলঙ্কৃত পাত্রে পরিবেশন করা হয় এবং ফিনজান নামক ছোট কাপে উপভোগ করা হয়।
  • জাবানা কফি – Jabana Coffee – (সুদান, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া): কাঁচা সবুজ কফির মটরশুটি হাতে ভেজে, তারপর একটি সূক্ষ্ম গুঁড়োতে চূর্ণ করে তৈরি করা হয়। গুঁড়োটি জল এবং আদা, দারুচিনি এবং এলাচের মতো মশলা দিয়ে জাবানা নামক একটি মাটির ফ্লাস্কে সিদ্ধ করা হয়। ফলাফলটি তুর্কি কফির মতো একটি শক্তিশালী, ঘন কফি, আদা যোগ করার সাথে একটি অতিরিক্ত কিক প্রদান করে।
  • স্বাদ এবং উপস্থাপনা: এই কফির প্রকারগুলি মশলা, রোস্ট প্রোফাইল এবং পরিবেশন পাত্রের ব্যবহারে আলাদা। লেভান্টাইন কফি হালকা এবং সূক্ষ্ম, আরবি কফি সুগন্ধযুক্ত এবং জটিল, এবং জাবানা কফি শক্তিশালী এবং মসলাযুক্ত।

এরাবিয়ান গাওয়া কফি বাংলাদেশে কোথায় পাওয়া যায়?:

২০২৩ সালের মে মাসে, চিকিং বাংলাদেশ গাওয়া প্রিমিয়াম ক্যাফে চালু করে, যা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গাওয়া কফি প্রদান করে। এটি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত।

এরাবিয়ান গাওয়া কফির দাম কত?

গাওয়া কফির দাম নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর, যেমন:

  • ব্র্যান্ড: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাওয়া কফি বাজারে পাওয়া যায়, এবং তাদের দামও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে খায়্যাল, আল আনসার, এবং ম্যাক্সগ্লোবাল।
  • পরিমাণ: কফি বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়, যেমন ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম, এবং 1 কেজি। বড় আকারের প্যাকেট সাধারণত ছোট আকারের প্যাকেটের তুলনায় কম দামে পাওয়া যায়।
  • প্রকার: এই কফি বিভিন্ন প্রকারে পাওয়া যায়, যেমন সাদা, এলাচ, এবং জাফরান। মশলাযুক্ত গাওয়া কফি সাধারণত সাদা গাওয়া কফির চেয়ে বেশি দামি হয়।
  • কোথায় কিনছেন: গাওয়ার দাম দোকান থেকে দোকানে ভিন্ন হতে পারে। অনলাইনে কেনার চেয়ে অফলাইনে কেনার সময় দাম বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশে গাওয়া কফির আনুমানিক দাম নিম্নরূপ:

২৫০ গ্রাম: ৳৫০০
৫০০ গ্রাম: ৳১,৫০০
১ কেজি: ৳৪,০০০

খায়্যাল ইনস্ট্যান্ট আরবিক কফি – Arabic Khayyal Coffee (২৫০ গ্রাম): ৳৭০০

উপসংহার:

এই কফি শুধু একটি পানীয় নয়, এটি আরব সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, অনন্য স্বাদ এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকরিতা এটিকে এমন একটি পানীয় করে তোলে যা চেষ্টা করার মতো।

তবে, মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে:

  • অতিরিক্ত কফি পান উদ্বেগ, অনিদ্রা এবং অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের কফি পান সীমাবদ্ধ করা উচিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here