sajek-valley

প্রকৃতির এক অপরূপা গ্রীন ভ্যালী, যার নাম সাজেক। ঢাকা থেকে মাত্র ৭/৮ ঘণ্টা দূরত্বে পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটি জেলায় সাজেক ভ্যালী অবস্থান। হাতে দুই দিন সময় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন এ সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য।

আরো পড়ুন:

সাজেক ভ্যালী ভ্রমণের বিস্তারিত 

সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত । সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন , যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা , দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু , পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা । সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে । রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায় । খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার । আর দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার । বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার

ঢাকা থেকে কিভাবে খাগড়াছড়ি যাবেনঃ
ঢাকা থেকে শ্যামলী , হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫২০ টাকা । শান্তি পরিবহনের বাস দীঘিনালা যায় । ভাড়া ৫৮০ টাকা । এছাড়া BRTC ও সেন্টমার্টিন্স পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায় ।

যোগাযোগঃ সেন্টমার্টিন্স পরিবহন – আরামবাগঃ ০১৭৬২৬৯১৩৪১ , ০১৭৬২৬৯১৩৪০ । খাগড়াছড়িঃ ০১৭৬২৬৯১৩৫৮ ।

শ্যামলী পরিবহন – আরামবাগঃ ০২-৭১৯৪২৯১ । কল্যাণপুরঃ ৯০০৩৩৩১ , ৮০৩৪২৭৫ । আসাদগেটঃ ৮১২৪৮৮১ , ৯১২৪৫৪ । দামপাড়া (চট্টগ্রাম)ঃ ০১৭১১৩৭১৪০৫ , ০১৭১১৩৭৭২৪৯ ।

শান্তি পরিবহন– আরামবাগ ( ঢাকা ) – ০১১৯০৯৯৪০০৭ । অক্সিজেন(চট্টগ্রাম) ০১৮১৭৭১৫৫৫২ ।

চট্টগ্রাম থেকেও খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । BRTC এসি বাস কদমতলী (চট্টগ্রাম): ০১৬৮২৩৮৫১২৫ । খাগড়াছড়িঃ ০১৫৫৭৪০২৫০৭ ।

খাগড়াছড়িতে কোথায় থাকবেনঃ
খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেল সহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে । দীঘিনালায় কয়েকটি হোটেল থাকলেও দীঘিনালা গেস্ট হাউজের মান কিছুটা ভালো ।

পর্যটন মোটেলঃ
এটি শহরে ঢুকতেই চেঙ্গী নদী পার হলেই পরবে । মোটেলের সব কক্ষই ২ বিছানার । ভাড়াঃ এসি ২১০০ টাকা, নন এসি ১৩০০ টাকা । এসি স্যুইট রুম ৩,১০০ টাকা। মোটেলের অভ্যন্তরে মাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বানানো আছে । তবে পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ভোল্টেজ ওঠানামা করায় এসি রুমগুলো নন-এসি হিসেবে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫ ।

হোটেল ইকো ছড়ি ইনঃ
খাগড়াপুর ক্যান্টর্মেন্ট এর পাশে পাহাড়ী পরিবেশে অবস্থিত । এটি রিসোর্ট টাইপের হোটেল । যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২৬২৫ , ৩৭৪৩২২৫ ।
হোটেল শৈল সুবর্নঃ ০৩৭১-৬১৪৩৬ , ০১১৯০৭৭৬৮১২ ।
হোটেল জেরিনঃ ০৩৭১-৬১০৭১ ।
হোটেল লবিয়তঃ ০৩৭১-৬১২২০ , ০১৫৫৬৫৭৫৭৪৬ , ০১১৯৯২৪৪৭৩০ ।
হোটেল শিল্পীঃ ০৩৭১-৬১৭৯৫ ।

দীঘিনালা গেস্ট হাউজঃ এটি দীঘিনালা শহরের বাস স্ট্যান্ডের উল্টো পাশে অবস্থিত । এটি দীঘিনালার আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে একটু মানসম্মত । এখানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে রুম নিয়ে থাকা যাবে

খাগড়াছড়ি টু সাজেক ভ্যালী ভাড়া ও বিস্তারিতঃ খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে একদিনে সাজেক ভ্যালী ঘুরে আসতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫০০০-৬০০০ টাকা । এক গাড়িতে ১৫ জন বসতে পারবেন । লোক কম হলে শহর থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন । ভাড়া ৩০০০ টাকার মতো নিবে । অথবা খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন । বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতি ভাড়া ১০০ টাকা । দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন । ফেরার সময় অবশ্যই সন্ধ্যার আগে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পার হতে হবে । তা না হলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে । ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন ।

খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয় । পথে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প । যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতে হবে । তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে । পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার । বাজার পার হলে পরবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট । এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংখোয়া ও ত্রিপুরারাও বাস করে । ১৮৮৫ সালে এই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় । এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই ।

রুইলুই পাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবেন সাজেক । সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প । এখানে হেলিপ্যাড আছে। সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া । এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই । কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে ।

সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর কোন ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে কংলক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয় না । ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন । একদিনে এই সব গুলো দেখতে হলে যত তারাতারি সম্ভব বেড়িয়ে পড়বেন । খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোরায় ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে ভুলবেন না ।

সাজেকে থাকবেন যেখানেঃ সাজেকে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের রিসোর্ট আছে যাতে আপনি নিশ্চিন্তে নিরাপদে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে থাকতে পারবেন । সেরকম কিছু কটেজের বিস্তারিত নিচে দেওয়া হলঃ-

রক প্যারাডাইস: সাজেকের কংলাক পাড়াতে অবস্হিত এ কটেজটি আপনাকে বেস্ট ভিউ দিবে সাজেকে,মনে হবে যেন মেঘের রাজ্যে ভেসে যাচ্ছেন,মুল সাজেক রুন্ময় পাড়ার উপরে এই রক প্যারাডাইস কটেজটি অবস্হিত । এর মালিক বিজু দা অসম্ভব ভালো মানুষ বুকিং করতে ফোন করতে পারেন ০১৮৪২৩৮০২৩৪ নাম্বারে ।

রক প্যারডাইস ,প্রতি রুমে চারজন থাকতে পারবেন ভাড়া পড়বে ২৫০০ টাকা এছাড়া বড় রুম আছে ৬ জন থাকতে পারবেন ৩৫০০ টাকা ভাড়া ,এছাড়াও তাবুতেও চাইলে থাকতে পারবেন ।

মেঘ মাচাং কটেজ: মেঘ মাচাং সাজেকের বেস্ট একটা কটেজ । মেঘের রাজ্যে ভেসে যাবার এইতো সুযোগ মেঘ মাচাং এ বুকিং দিতে ফোন করতে পারেন +880 1822-168877 নাম্বারে । মেঘ মাচাং এর ভাড়াও চারজনের রুম ২৫০০ টাকা । তবে জনপ্রিয় কটেজ বলে বুকিং অনেক আগে করে রাখতে হয় না হয় পাবেন না বুকিং।

এছাড়াও আছে নিরিবিলি কটেজ ,লুসাই কটেজ যা থেকে মেঘ এর ভিউ ভালো পাওয়া যায় । এগুলো ছাড়াও আলো রিসোর্ট, জলরিসোর্ট সহ ছোট খাট আরও অনেক কটেজ ওখানে রয়েছে । রয়েছে উপজাতিদের ঘর বাড়ী যেখানে থাকাও খাওয়ার ব্যবস্হা রয়েছে ।

এসব কটেজ ছাড়াও ভিআইপি কিছু রিসোর্ট রয়েছে যেমন সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে আছে সাজেক রিসোর্ট যার ভাড়া ১০-১৫ হাজারের মধ্যে। বুকিং নাম্বার : ০১৮৫৯০২৫৬৯৪ ,আছে রুন্ময় রিসোর্ট যার ভাড়া রুম প্রতি ৪৫০০-৫০০০ টাকা ,যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২

রুন্ময় রিসোর্ট: যাবার আগে ফোন দিয়ে বুকিং করে যেতে পারেন কারণ ছুটির দিনগুলোতে ভালো ভালো সবগুলো কটেজ ও রিসোর্ট বুকড করা থাকে । তবে এগুলো ছাড়াও অনেক কটেজ খালী পাবেন সমস্যা নেই ।

সাজেক যেতে গাইডের তেমন দরকার নেই । তবুও প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন । আজম (গাইড , দীঘিনালা – ০১৫৫৭৩৪৬৪৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here