জন্মের পর শিশুর টিকা খুই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের কোন টিকা (Child Vaccine) কখন দিবেন, কিভাবে দিবেন ? শিশুর টিকার তালিকা, টিকাদান কর্মসূচী, টিকা দেওয়ার নিয়ম, রোটা ভাইরাস টিকা, শিশুর বেসরকারি টিকার তালিকা, আপনার শিশুকে টিকা দিন এখানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেওয়া আছে, যেখানে আপনার শিশুকে টিকা দিতে পারেন ।
আরো পড়ুন :
টিকার নাম | টিকা দেওয়ার সময় | রোগ |
বিসিজি | জন্মের পর পর অথবা ১৪ দিনের মধ্যে | যক্ষ্মা |
ও. পি. ভি. | জন্মের পর থেকে ৬ সপ্তাহ | পোলিও |
ও. পি. ভি./আই. পি. ভি. | ৬ সপ্তাহ/ ২ মাস | পোলিও |
ও. পি. ভি./আই. পি. ভি. | ১০ সপ্তাহ / ৪ মাস | পোলিও |
ও. পি. ভি. | ১৪ সপ্তাহ / ৪ মাস | পোলিও |
ও. পি. ভি. | ৯ মাস | পোলিও |
ও. পি. ভি./আই. পি. ভি. (১ম বুস্টারডোজ ) | ১৫ – ১৮ মাস | পোলিও |
ও. পি. ভি./ আই. পি. ভি. | ৪- ৬ বছর | পোলিও |
ডিপিটি টিকা | ৬ সপ্তাহ / ২ মাস | ডিপথেরিয়া, পারটোসিস বা হুপিং কাশি এবং টিটেনাস |
ডিপিটি টিকা | ১০সপ্তাহ / ৪ মাস | ডিপথেরিয়া, পারটোসিস বা হুপিং কাশি এবং টিটেনাস |
ডিপিটি টিকা | ১৪ সপ্তাহ / ৪ মাস | ডিপথেরিয়া, পারটোসিস বা হুপিং কাশি এবং টিটেনাস |
ডিপিটি টিকা (১ম বুস্টার ডোজ ) | ১৫-১৮ মাস | ডিপথেরিয়া, পারটোসিস বা হুপিং কাশি এবং টিটেনাস |
ডিপিটি টিকা | ৪-৬ বছর |
ডিপথেরিয়া, পারটোসিস বা হুপিং কাশি এবং টিটেনাস |
নিউমোকক্কাল টিকা | ৬ সপ্তাহ / ২ মাস | নিউমোনিয়া |
নিউমোকক্কাল টিকা | ১০ সপ্তাহ / ৪ মাস | নিউমোনিয়া |
নিউমোকক্কাল টিকা | ১৪ সপ্তাহ / ৪ মাস | নিউমোনিয়া |
নিউমোকক্কাল টিকা (১ম বুস্টারডোজ ) | ১৫ – ১৮ মাস | নিউমোনিয়া |
পেনটা ১, পিসিভি ১ এবং ওপিভি ১ | ৬ সপ্তাহ বা দেড় মাস (৪৫ দিন) বয়সে | ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস, পোলিও, হিমফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি জনিত রোগ, হেপাটাইটিস বি। |
পেনটা ২, পিসিভি ২ এবং ওপিভি ২ | ১০ সপ্তাহ বা আড়াই মাস বয়সে | ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস, পোলিও, হিমফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি জনিত রোগ, হেপাটাইটিস বি। |
পেনটা ৩, ওপিভি ৩ এবং আইপিভি | ১৪ সপ্তাহ বা সাড়ে তিন মাস বয়সে | ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস, পোলিও, হিমফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি জনিত রোগ, হেপাটাইটিস বি। |
পিসিভি ৩ | ১৮ সপ্তাহ বা সাড়ে চার মাস বয়সে | নিউমকক্কাল নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিস |
এম আর | ৯ মাস বয়সে (২৭০ দিন) | হাম ও রুবেলা |
হামের টিকা (মিজেলস) | ১৫ মাস বয়সে | হাম |
হেপাটাইটিস-বি টিকা | জন্মের পর-৬ সপ্তাহ | হেপাটাইটিস-বি |
হেপাটাইটিস-বি টিকা | ৬ সপ্তাহ/২ মাস | হেপাটাইটিস-বি |
হেপাটাইটিস-বি টিকা | ১০ সপ্তাহ / ৪ মাস | হেপাটাইটিস-বি |
হেপাটাইটিস-বি টিকা | ১৪ সপ্তাহ / ৪ মাস | হেপাটাইটিস-বি |
হেপাটাইটিস-বি টিকা (১ম বুস্টার ডোজ ) | ১৫-১৮ মাস | হেপাটাইটিস-বি |
হেপাটাইটিস-বি টিকা | ৪-৬ বছর | হেপাটাইটিস-বি |
শিশুদের টিকার বিবরনঃ
* পোলিও টিকা: পোলিও একটি মারাত্মক ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় শিশুকে সঠিক সময়ে টিকা দেয়া। দুইভাবে পোলিও টিকা দেয়া যেতে পারে। যথা- ও. পি. ভি. এবং আই. পি. ভি. । ও. পি. ভি. হল ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন যা মুখে খাওয়ানো হয়ে থাকে এবং আই. পি. ভি. হল ইনএক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন যা ইনজেকসান এর মাধ্যমে দেওয়া হয়।
* বিসিজি টিকা: বিসিজি টিকা হলো যক্ষ্মার প্রতিষেধক। শিশুর জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই টিকা দিতে হয়। বিসিজি টিকা দিলে মরণব্যাধি যক্ষ্ম থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এই টিকার শুধু মাত্র একটি ডোজ। বাম হাতের কাধের কাছের হাতের অংশের চামড়ার নিচে এটি দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে হালকা ক্ষত বাম লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়ার মত কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
* ডিপিটি টিকা: ডি তে ডিপথেরিয়া, পি তে পারটোসিস বা হুপিং কাশি ও টি তে টিটেনাস। তিনটি মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণরোগের নাম। ডিপিটি টিকাটি এই তিনটি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাই শিশুর জন্য এই টিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ ।পারটুসিস টিকা দেয়ার সময় অনেকে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যাদের এ প্রবণতা বেশি বা শরীর দুর্বল তাদের শুধু ডিপথেরিয়া ও টিটেনাসের টিকা দেয়া হয়।
* হেপাটাইটিস-বি টিকা (হেপ বি): সকল নবজাতকের হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ হওয়ার আগে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন (হেপ বি) নেয়া উচিত।
* হামের টিকা: হামের টিকা শিশুদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি টিকা। হাম একটি খুব মারাত্নক কষ্টদায়ক একটি রোগ। এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য শিশুদের অবশ্যই হামের টিকা দেয়া উচিত। শিশুর ১৫ মাস বয়সে এ টিকা দিতে হয়।
* টাইফয়েড টিকা: টাইফয়েড একটি মারাত্নক ঘাতক ব্যাধি যা শিশুর যে কোনো অঙ্গ বিকল করে দিতে পারে এবং শিশু হারিয়ে ফেলতে পারে তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা। এই রোগ জীবন পর্যন্ত নিয়ে নিতে পারে। তাই সময়মত শিশুদের টাইফয়েড এর টিকা দিতে হয়। দুই বছর বয়সের পর শিশুদের এই টিকাটি তিন বছর পর পর দিতে হয়।
* রোটাভাইরাস টিকা: ডায়রিয়া বাচ্চাদের জন্য একটি হুমকি স্বরূপ। বাংলাদেশের বেশির ভাগ বাচ্চা ছোট বয়সে ডায়রিয়াতেভোগে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক পরিচর্যা করা হলে ডায়রিয়া থেকে বাচ্চা সুস্থ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু রোটা ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া প্রাণঘাতক হতে পারে। তাই ডায়রিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে বাচ্চাদের রোটা ভাইরাস এর প্রতিষেধক রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন বা আরভি দিতে হবে। ডায়রিয়ার প্রতিষেধকের টিকা তিনটি ডোজে নিতে হয়। প্রথম ডোজ ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের বয়সের মধ্যে দিতে হবে। পরবর্তী ডোজ ১০ সপ্তাহ/৪মাসের মাঝে দিতে হবে।
* নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন: বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিউমোনিয়া বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনকে শিশু মৃত্যুহারের অন্যতম কারন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী ভাইরাস হল নিউমোকক্কাস (স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি) ও হেমোফাইলাস ইনইয়ুযেকি। এই দুই ভাইরাস এর প্রতিষেধক হিসেবে এই টিকার কোন বিকল্প নেই। এর জন্য সিজনাল অ্যান্টি ভাইরাল ভ্যাকসিন বা নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন যে কোনটি দিলেই হয়। সাধারনত অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুদের এই টিকা দিতে হয়। নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দিলে ফুসফুসের সংক্রমণ কম হয় এবং ঝুঁকি কম থাকে।
* ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন: ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ছোঁয়াচে ব্যাধি। এই ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ সুস্থ মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় । এই রোগে প্রথমে অনবরত হাঁচি হয় ও নাক দিয়ে জল পড়ে, পরে প্রচন্ড গা, হাত, পা বেদনা সহ তীব্র জ্বর হয় । তাই বাচ্চাদের এই রোগের টিকা দেয়া অত্যন্ত জরুরী। এই রোগের জন্য সাধারণত দুই ধরনের টিকা আছে- টিআইবি ও এএআইভি। এর মধ্যে টিআইবি ছয় মাস বয়সে এবং এএআইভি দুই বছর বয়সের পর দিতে হয়।
* চিকেন পক্স টিকা: চিকেন পক্স বা জল বসন্ত একটি ভাইরাস সংক্রমক রোগ। জন্মের ৫ দিনের মাঝে এই রোগ হলে মারাত্মক ভাইরেমিয়া-এ জনিত কারণে বাচ্চার মৃত্যুও হতে পারে। জল বসন্ত প্রতিরোধ করতে শিশুর জন্মের ১২ মাস পরে এবং ৪-১২ বছরের মাঝে দুই ডোজে টিকা দিতে হয়।
* এম এম আর টিকা: এম এম আর মূলত মাম্পস, মিজলস এবং রুবেলা রোগের টিকা। এই রোগ গুলোর টিকা প্রধানত ৪ থেকে ৬ বছরের মাঝেই দিয়ে দিতে হয়।
প্রয়োজনীয় তথ্য:
* একই টিকার দুই ডোজের মধ্যে কমপক্ষে ২৮ দিনের বিরতি থাকতে হবে।
* একই দিনে একাধিক টিকা দিলে কোনো সমস্যা নেই।
* কোনো কারণে তারিখ পার হয়ে গেলে পোলিও, ডিপিটি, হেপাটাইটিস বি তারিখের অনেক পরে এমনকি এক বছর পরে দিতেও সমস্যা নেই।
* পোলিও টিকা মুখে খেতে হয় বলে ডায়রিয়া থাকলে শিডিউলের ডোজ খাওয়ানোর পর ২৮ দিন বিরতিতে একটি অতিরিক্ত ডোজ খাওয়ানো হয়।
* বিসিজি টিকা দেয়ার এক মাসের মধ্যে টিকার স্থানে ক্ষত হয়, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
* ছোটখাটো সামান্য অসুস্থতা যেমন: জ্বর, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি কারণে টিকাদান স্থগিত করার কারণ নেই। তবে মারাত্মক অসুস্থ শিশু, খিঁচুনি হচ্ছে এমন শিশু এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল শিশুকে টিকা দেয়া উচিত নয়।
নবজাতক শিশুর প্রথম টিকা
নবজাতক শিশুর প্রথম টিকাটি জন্মের পরপরই দেওয়া হয়। এই টিকাটি হলো বিসিজি, যা যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। টিকাটি শিশুর বাম বাহুর উপরের অংশে দেওয়া হয়, এবং সাধারণত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।
তবে, কিছু শিশুর ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার জায়গায় সামান্য ফোলাভাব বা লাল হয়ে যাওয়া দেখা যেতে পারে। এই লক্ষণগুলি সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে যায়।
শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয়
বাংলাদেশে সরকারী টিকাদান কর্মসূচি অনুযায়ী, শিশু জন্মের পর থেকেই টিকা দেওয়া শুরু করা যায়। জন্মের পরপরই প্রথমে যক্ষ্মা প্রতিরোধী বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। এরপর ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ এবং ১৪ সপ্তাহ বয়সে পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা (ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি) দেওয়া হয়।
১৮ সপ্তাহ বয়সে হেপাটাইটিস-এ টিকা দেওয়া হয়। ৯ মাস বয়সে হাম ও রুবেলা টিকা (এমআর) দেওয়া হয়। এবং ১৫ মাস বয়সে হাম টিকা দেওয়া হয়।
এছাড়াও, ৬ মাস বয়স থেকে প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
শিশুদের মোট কয়টি টিকা দিতে হয়
বাংলাদেশে সরকারী টিকাদান কর্মসূচি অনুযায়ী, শিশুদের মোট ৯টি টিকা দিতে হয়। এই টিকাগুলো দেওয়া হয় শিশুর জন্ম থেকে ১৫ মাস বয়স পর্যন্ত। টিকাগুলো হলো:
- জন্মের পরপর: বিসিজি (যক্ষ্মা)
- ৬ সপ্তাহ: পেন্টাভ্যালেন্ট (ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি)
- ১০ সপ্তাহ: পেন্টাভ্যালেন্ট
- ১৪ সপ্তাহ: পেন্টাভ্যালেন্ট, পোলিও-আইপিভি
- ১৮ সপ্তাহ: হেপাটাইটিস-এ
- ৯ মাস: এমআর (হাম ও রুবেলা)
- ১৫ মাস: এমআর, হেপাটাইটিস-বি
“এই প্রতিবেদনের কোন তথ্য ভুল থাকলে CONTACT পেজের মাধ্যমে জানালে খুব উপকৃত হবে. ধন্যবাদ” – “If there is any incorrect information in this report, it would be very helpful if you could let us know through the CONTACT page. Thank you.”