করোনা মহামারির থাবায় বিপর্যস্ত ভারতে এখন প্রতি ঘণ্টায় ১২০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি ৩ মিনিটে মারা যাচ্ছেন একজন। এদিকে দেশটিতে কভিডে এবার এক দিনে তিন হাজার ৭৮০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এটাই এ মহামারিতে দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা।
সিবিএস নিউজ জানায়, ভারতে গত মাসেই শনাক্ত হয়েছে ৭০ লাখের বেশি কভিড রোগী। এ সময় মারা যান ৫৭ হাজার লোক। সে হিসাবে গত মাসে প্রতি ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮০ জন। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে প্রতি ঘণ্টায় মৃত্যু পৌঁছেছে ১২০ জনে। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ, দিনরাত বিরামহীন মরদেহ দাহ করলেও শ্মশানের সামনে লাশের স্তূপ জমছে। বানাতে হচ্ছে অস্থায়ী শ্মশান।
ভারতে এক মাসের বেশি সময় আগে কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক রূপ নেওয়ার পর এখনও হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের তীব্র সংকট রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে বহু মানুষ।
গতকাল বুধবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে তিন লাখ ৮২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা আগের দু’দিনের চেয়ে বেশি। গত শনিবার দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চ চার লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
সব মিলিয়ে কভিড-১৯-এ দেশটিতে এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে দুই কোটি ছয় লাখ ৬৫ হাজার ১৪৮ জন। সরকারি হিসাবে এ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ২৬ হাজার ১৮৮ জনের। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা আগামী এক মাসেই এর প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে গত এক সপ্তাহে যত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার ৪৬ শতাংশই ভারতে মিলেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত এক সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯-এ হওয়া মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশও দেখেছে ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশটি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ভারতের দরকার কোটি মানুষকে টিকাদান। তবে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা রপ্তানিকারক দেশটিতে এখন কভিড টিকার সংকটও চরমে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দেশটিতে যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হয়েছে, প্রকৃত আক্রান্ত তার ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি। অনেক রাজ্যে চিকিৎসার অপেক্ষায় থাকা অসংখ্য কভিড আক্রান্তের মৃত্যু হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে ও হাসপাতালের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় কিংবা বাড়িতে। এ অবস্থায় ভারতজুড়ে লকডাউন আরোপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর চাপ বাড়ছে। তার নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।