বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত করতে আগ্রহী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। ওয়াশিংটন সফরে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বুধবার টেলিফোন আলোচনায় এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে পাঠানো পৃথক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যৌথ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্তায় জানানো হয়, কভিড-১৯ মহামারির কারণে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সশীরে সাক্ষাৎ এবং বৈঠক হয়নি। এ জন্য টেলিফোন আলোচনার শুরুতেই দুঃখ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৈঠকে ড. মোমেন এবং অ্যান্টনি ব্লিংকেন সাধারণ লক্ষ্য এবং পারস্পরিক স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে এবং সহযোগিতা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় বিশ্ব নেতৃত্বের ভূমিকায় আসার জন্য জো বাইডেন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানান ড. মোমেন। কভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নতুন মার্কিন প্রশাসনের পদ্ধতিরও প্রশংসা করেন তিনি।

আলোচনায় ড. মোমেন আশা করেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিকটতম সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। জাতির পিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঢাকা সফরেরও আমন্ত্রণ জানান তিনি।

আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে এ জনগোষ্ঠীর মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে নেপিদোর ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান ড. মোমেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনে একজন রোহিঙ্গাবিষয়ক দূত নিয়োগেরও আহ্বান জানান। তিনি মিয়ানমারের কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ড. মোমেন। বাংলাদেশে বর্তমান বিনিয়োগের বিদ্যমান অনুকূল পরিস্থিতি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসার যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ড. মোমেন জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে যা আছে: দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, টেলিফোন আলাপে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথ সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার করার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া এবং এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে দুই দেশ যৌথ সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করতে সম্মত হয়েছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে যথাযথ মানবাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয় নিয়েও দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ড. আব্দুল মোমেনকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here