সদ্যপ্রণীত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বর্তমানে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য। এরই মধ্যে এই আইনের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা ‘গণআন্দোলনে’ সাড়া দিয়েছেন পাঞ্জাব, দিল্লি, কেরালা, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা। তারা এই আইন না মানার ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাশ হওয়ার পর একটি টুইট করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী ও বিজেপি সংসদ সদস্য রূপা গাঙ্গুলী।

তার সেই টুইট হয়ে উঠেছে গরম তেলে পানির ছিটা।

চল্লিশ বছর আগে বোরকা পরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিলেন রূপা গাঙ্গুলী। সে হিসেবে তিনি অনুপ্রবেশকারী। তাহলে ভারতে রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) অনুযায়ী তার নাগরিকত্ব কি থাকবে?

নিজেই এমন প্রশ্ন ছুড়েছেন এই বিজেপি সংসদ সদস্য।

রূপার এমন টুইটে অনেক ভারতীয় প্রশ্ন তুলেছেন, তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)-এর আওতায় রূপা গাঙ্গুলীকে কি এখন শরণার্থী ধরা হবে? তাকে কি এখন নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে?

কেউ কেউ বলেছেন, তাকে যদি এখন ভারতীয় নাগরিক বলে বিবেচনা না করা হয় তবে তিনি কি করে সংসদ সদস্য হয়ে বিধানসভায় থাকতে পারেন? তিনি তো নাগরিকই নন।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাশ হওয়ার পর রূপা টুইট করেন, ‘আমি তো খান টাইগারের বেগম হয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে অপহরণ করতে এসেছিল তারা। সে রাতে যদি আমি এবং আমার মা বোরকা পরে বাংলাদেশের দিনাজপুর থেকে পালাতে না পারতাম, তবে আজ বিজেপির সাংসদ হতে পারতাম না।’

রূপার এমন টুইটের পরপরই ভারতে শুরু হয় নতুন বিতর্ক। একজন অনুপ্রবেশকারীকে কিভাবে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত করে বিজেপি সে প্রশ্নে এখন উত্তাল ভারত।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘রূপা গাঙ্গুলী নিজেই বলছেন, উনি বাংলাদেশ থেকে বোরকা পরে এসেছেন। সে বিচারে উনি নাগরিক নন, একজন অনুপ্রবেশকারী। সেটা হলে বিজেপি তাকে সংসদ সদস্য করল কী করে?

এখনই রূপা গাঙ্গুলীর ইস্তফা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ফিরহাদ হাকিম।

জবাব এসেছে বিজেপি থেকেও।

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘রূপা শরণার্থী হয়ে থাকলে আগামীকালই নাগরিকত্বের আবেদন করে ভারতের নাগরিক হতে পারবেন। এ নিয়ে জল ঘোলা করার কিছু নেই।’

রূপাই প্রথম নন; শরণার্থী অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ অনেক রাজ্য থেকেই অনেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন বলে দাবি করেন দিলীপ ঘোষ।

এদিকে, দিলীপ ঘোষের এমন জবাবে তার দিকে এক ঝাঁক প্রশ্নের তীর ছুড়েছেন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা।

তারা বলছেন, ‘অ-নাগরিক’ সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত সরকার কি বৈধ? রূপার মতো বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারীরা কি শরণার্থী হিসেবেই নাগরিকত্বের অধিকার ভোগ করছেন? এটা কি স্ববিরোধিতা নয়?

প্রসঙ্গত, রূপা গাঙ্গুলী একজন ভারতীয় অভিনেত্রী, গায়িকা ও বিজেপি দলীয় সংসদ সদস্য। কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ছবিতে কপিলা চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি থেকে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here